আসুন ডেটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং এর সাথে পরিচিত হই!

 যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, “বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যে সব রাষ্ট্র সব থেকে বেশি এগিয়ে আছে তাদের এত উন্নতির কারণ কি?”


স্বাভাবিক ভাবেই অনেকের মনে অনেক রকম উত্তর আসবে, কিন্তু যে একটি উত্তরে প্রায় সবাই এক সাথে সমর্থন দিয়ে উঠবেন, তা হচ্ছে প্রথম শিল্প বিপ্লব। তৎকালীন সময়ে যারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রথম শিল্প বিপ্লবে সফল ভাবে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিল, তারা সমাজ ব্যবস্থার ও বিজ্ঞানের চরম উন্নতির সাক্ষী হয়েছিল। প্রথম শিল্প বিপ্লব, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব তারপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু হয়। তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব হিসেবেও বলতে পারেন। আমাদের বাংলাদেশ তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়টিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে গেছে এবং বর্তমানে এর অনেক সুফল আমরা ভোগ করে চলেছি। কালের বিবর্তনে এখন সময় এসেছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের। পূর্বের মতো বর্তমান সময়েও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য নিজেদের উপযোগী করে তোলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায় মানুষের চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতাকে রোবট বা মেশিনের মাঝে কৃত্তিম উপায়ে প্রদান করা। সহজ ভাবে বললে রোবট বা মেশিন কে মানুষের মতো বুদ্ধি প্রদান করা। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটি সাবসেট হচ্ছে মেশিন লার্নিং এবং মেশিন লার্নিং এর এলগরিদম এর জন্য প্রয়োজনীয় ডেটার বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়োগ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ডেটা সাইন্স এবং মেশিং লার্নিং।


Industrial Revolution. (Image source: www.forbes.com)



ডেটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং সমন্ধিত এই আর্টিকেলটি কেন পড়বেন আপনি?


প্রিয় পাঠক, হতে পারে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত আছেন। গ্রাজুয়েশন শেষে নিজেকে শিক্ষিত বেকার না রাখতে চেয়ে হয়তো একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা নিতে চাচ্ছেন। আপনার গ্রাজুয়েশন শেষ হলে নিজের অনুষদ সম্পর্কিত সেক্টর বা অন্য কোন সেক্টরে চাকরি করবেন এমন ভেবে রেখেছেন। এতোটুকু পর্যন্ত যাদের গোছানো আছে তাদের জন্য শুভ কামনা, কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় যারা এরকম পরিস্থিতিতেও ঠিক করতে পারছেন না কিভাবে আপনারা আপনাদের ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছেন বা আপনার ঠিক করে রাখা রাস্তার গন্তব্য আসলে কোথায়? এই ভ্রমণে আপনাকে ঠিক কি কি চড়াই-উৎরাই পারি দিতে হবে তা জানতে এবং পূর্ব প্রস্ততির নেওয়ার জন্য সহায়তা খোঁজ করছেন। অথবা আপনি কোন সেক্টরে কর্মরত অবস্থায় রয়েছেন কিন্তু সময়ের চাহিদায় এবং নিজের ক্যারিয়ার আরও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনার জব সেক্টর পরিবর্তন করার কথা ভাবছেন। তাদের জন্য বিবেচনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে ডেটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং।


আপনি যদি কম্পিউটার সাইন্স বা এর কাছাকাছি কোন অনুষদের না হয়ে থাকেন তবুও কি আপনার এই আর্টিকেলটি পড়া প্রয়োজনীয়?


ডেটা সাইন্স, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি শব্দ শুনলেই বেশির ভাগ মানুষের মনের ভিতর কম্পিউটার সাইন্স বা এর কাছাকাছি সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ গুলোর কথা চলে আসে। সবাই ভাবে ডেটা সাইন্স নিয়ে কাজ করতে চাইলে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বুঝি উপরোক্ত নির্দিষ্ট কিছু অনুষদ থেকেই হওয়া লাগবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন সেক্টরভেদে বিজনেস এডমিনস্ট্রেশন এর বহু শিক্ষার্থীরা পাইথন (Python) বা আর (R)  শেখার মাধ্যমে ডেটা এনালিটিক্স এর জগৎ-এ প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে কম্পিউটার সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড এর শিক্ষার্থীদের সাথে  সমান ভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্ট্যাটিস্টিক্স, ম্যাথম্যাটিক্স, ইকোনোমিক্স, বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদ, সাথে বিজ্ঞান বিভাগ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা ডেটা সাইন্স ফিল্ডে চাকরি করছেন। সুতরাং এই ফিল্ডে আপনি যদি কম্পিউটার সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের নাও হয়ে থাকেন, তবুও আপনি ডেটা সাইন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সমান সুযোগ পাবেন।

(Image source: medium.com)



ডেটা সাইন্স এবং এর গুরুত্ব কি?


ডেটা সাইন্স হচ্ছে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেক্টর যেখানে বিভিন্ন গাণিতিক, পরিসংখ্যানগত এবং অর্থনৈতিক গণনা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা ঘটনার সম্পর্কে উক্ত ঘটনার যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে, প্রদত্ত ঘটনা বা ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সাহায্য করে। (ডেটা সাইন্স একই সাথে অনেক সেক্টরে ব্যবহার হওয়ার কারণে এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের কারণে এর সংজ্ঞা নির্দিষ্ট ভাবে মেনে নেওয়া এখনই ঠিক হবে না)।


ডেটা সাইন্স একই সাথে মেডিকেল সাইন্স/পাবলিক হেলথ্/ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরেও ব্যবহার হতে পারে আবার প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক পর্যাপ্ততা প্রাপ্তির জন্যই ডেটা সাইন্স এর ব্যবহার হয়ে আসছে সেক্ষেত্রে বলা যায় তথ্য-উপাত্ত বা ডেটা নিয়ে যেখানে কাজ রয়েছে সেখানে ডেটা সাইন্স এর প্রয়োগ থাকা অসম্ভব কিছু নয়। যেসব শিক্ষার্থীরা ডেটা সাইন্স এ নিজেদের ক্যারিয়ার গড়বেন বলে ভেবে নিয়েছেন তারা এই প্রাথমিক ধারনাটুকু নিজেদের হাতেখড়ি হিসেবে জেনে নিন যে, বিভিন্ন গোছালো (Structured) বা অগোছালো (Unstructured) ডেটা ব্যবহার করে সেক্টরভেদে ব্যবসায় এর জন্য উপযোগী উপলব্ধি (Insight) বের করাই হচ্ছে সরল দৃষ্টিতে একজন ডেটা সাইন্টিস্ট এর কাজ।


ডেটা সাইন্স এর কাজ এবং প্রয়োগ সম্পর্কে একটি বাস্তব উদাহরন 


মনে করুন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কোন ব্যাক্তি ডেটা সাইন্টিস্ট  হিসেবে যোগদান করেছে। সেই প্রতিষ্ঠান তাঁদের নতুন কোন পন্যের জন্য একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা কিছু হিসাব দেখতে চাচ্ছে যে, এডভার্টাইজিং এর ওপর কতটুকু টাকা খরচ করলে তাদের জন্য ভালো হয়? কত পরিমাণ টাকা খরচ না করলেই নয় বা কত পরিমান টাকা খরচ তাদের জন্য অপচয় হয়ে যাবে না এবং তাদের পণ্যের ধরণের ওপর ভিত্তি করে প্রিন্ট, টেলিভিশন কমার্শিয়াল নাকি ই-মার্কেটিং এগুলোর ভিতর কোনটিতে বেশি জোর দেওয়া উচিৎ হবে? 


এরকম পরিস্থিতিতে দ্বায়িত্ব আসবে ঐ কোম্পানির ডেটা টিম অথবা সেই ডেটা সাইন্টিস্ট ব্যাক্তির এর উপর। ধরা যাক সেই ডেটা সাইন্টিস্ট ব্যাক্তি ঐ কোম্পানির বিগত সালের এডভার্টাইজমেন্ট প্যাটার্ন এবং সেলস রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত ডেটার এনালাইসিস করে দেখলেন প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতাদের থেকে সব থেকে বেশি এনগেজমেন্ট এসেছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর মাধ্যমে। অর্থাৎ কোম্পানিটি যত ধরনের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়েছিল তার ভেতর সব থেকে বেশি এক্সপোজার তারা পেয়েছিল ইনফ্লুয়েন্সারদের কন্টেন্ট স্পন্সর করার মাধ্যমে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি ডেটা সাইন্টিস্ট যখন তার মার্কেটিং টিম এক্সিকিউটিভদের দিবে তখন তারা অন্যান্য স্ট্রাটেজির তুলনায় এই নির্দিষ্ট স্ট্রাটেজির উপর বেশি জোর দিবে এবং সেলস এর পরিমাণ এর সাথে তুলনা করে মার্কেটিং এর জন্য টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করাও তাদের জন্য সহজ হবে।


এ রকম আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের কোন নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা আগামী মৌসুমে কেমন হতে পারে তা ডেটা সাইন্টিস্টরা ডিমান্ড ফোরকাস্টিং এর মাধ্যমে বলার চেষ্টা করে আবার পণ্যটি তার কত পরিমাণ ক্রেতা হারাতে পারে (বর্তমানে পণ্যটি ক্র‍য় করছেন এমন ক্রেতা) তা জানার জন্য কাস্টমার চার্ন প্রেডিকশন রেট বের করতে পারেন।


উপরের উদাহরণগুলো একটি নির্দিষ্ট সেক্টরের জন্য কিছু কাজের নমুনা মাত্র। নিম্নে আরও কিছু সেক্টরের নাম উল্লেখ করা হলো যেখানে ডেটা সাইন্স এর ব্যবহার রয়েছেঃ


  • মার্কেটিং 

  • হেলথ্কেয়ার/মেডিসিন

  • জার্নালিজম (বিশেষ করে ডেটা জার্নালিজম) 

  • ফিন্যান্স এবং ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম

  • রিটেইল

  • ম্যানুফ্যাকচারিং

  • ই-কমার্স 

  • টেলিকমিউনিকেশন 

  • মিডিয়া

  • হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট 

  • ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট 


উপরোক্ত সেক্টরগুলো সহ আরও কিছু সেক্টর আছে যেসব জায়গায় ডেটা সাইন্স এর ব্যবহার হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যৎ সময় এই তালিকা আরও বড় হতে থাকবে। মূলত এই ডিজিটাল যুগে মানুষ প্রায় তার প্রত্যেকটির কাজের জন্যই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট রেখে যাচ্ছে,সোশ্যাল মিডিয়ায় লগইন করা থেকে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করে বাজারে পণ্য ক্র‍য় করা প্রায় সব কিছুই ডিজিটালভাবে হচ্ছে যার কারণে এইসব কাজের ডিজিটাল ডাটাও উৎপন্ন হয়ে চলেছে অনবরত। তাই ডেটা সাইন্স এর ব্যবহারকারী সেক্টর এর সংখ্যা ভবিষ্যৎ সময়ে আরও বেড়ে চলবে।


ডেটা সাইন্সে এ ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে কি করনীয়?

( Image source: educative.io)


ডেটা সাইন্স এর মতো বিশাল একটি ডোমেইন এ পুরোদস্তুর দক্ষতা অর্জন করা অল্প কয়েকদিনের কাজ নয়। দিনের পর দিন লেগে থেকে অধ্যবসায় এর মাধ্যমে ডেটা এনালিটিক্স এর সকল বিষয় আয়ত্ত্বে আনতে থাকলে ডেটা সাইন্স সেক্টরে আপনার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। তবে ডেটা সাইন্সের বিশালত্বের কথা শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। কিছু কিছু সাবজেক্ট ও তাদের কিছু টপিক এর উপর বেসিক কিছু ধারনা নিয়ে সেগুলো হাতে কলমে চর্চা করতে থাকলে ৫ থেকে ৬ মাসের ভিতরে আপনি বিভিন্ন প্রজেক্ট করতে সক্ষম হয়ে উঠবেন।


ডেটা সাইন্সে হাতেখড়ির জন্য যে যে স্কিলগুলো প্রয়োজন।


ডেটা সাইন্সে ব্যবহৃত  থিওরিটিক্যাল বিষয়গুলো হচ্ছে


  • প্রোবাবিলিটি এবং স্ট্যাটিস্টিক্স 

  • ক্যালকুলাস

  • লিনিয়ার প্রোগ্রামিং 

  • লিনিয়ার আলজেবরা

  • বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এলগোরিদম 


বিভিন্ন এনালিটিক্যাল ও প্রেজেন্টেশন টুলস সমূহ


  • মাইক্রোসফট এক্সেল

  • পাওয়ারপয়েন্ট

  • এস.পি.এস.এস (SPSS)

  • পাওয়ার বি.আই (Power BI) / ট্যাবলিউ (Tableau)

  • এস.কিউ.এল (SQL) (সিকুয়েল) / নো এস.কিউ.এল

  • পাইথন (Python) /আর (R)


ইত্যাদি।


শুরুতেই বলে নিচ্ছি স্ট্যাটিস্টিক্স, ক্যালকুলাস এর মতো আরও বিভিন্ন বড় বড় সাবজেক্ট এর নাম দেখে শুরুতেই ভড়কে যাবেন না। এই সব নাম এক সাথে দেখে প্রথমে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কারণ এই সব বিষয়গুলো নিজেরাই নিজেদের ভেতর বিশাল আলোচনা এবং পড়াশোনার বস্তু। এই বিষয়গুলো পড়ে কম্পলিট করে দেওয়ার মতো ব্যাপার এখানে সহজে আসে না। নিয়মিত চর্চা এবং অসংখ্যবার রিভিশন এর মাধ্যমে এইসব থিওরি মনে রাখতে হয়, যার জন্য আপনাদের অবশ্যই শতভাগ মনোনিবেশের মাধ্যমে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে এইসব বিষয়গুলোর নারী-নক্ষত্র সব কিছুই জেনে যে আপনাকে ডেটা সাইন্সের যাত্রা শুরু করতে হবে ব্যাপারটা তেমন না। কিছু নির্দিষ্ট টপিক এবং তাদের প্রয়োগ শিখে গেলেই আপনি আপনার পথ খুঁজে পাবেন। এবং পরবর্তীতে সেল্ফ লার্নিং এর মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন। অন্যথায় সব কিছু একেবারে শিখে শুরু করতে গেলে এক জায়গায় আটকে গিয়ে ধীরে ধীরে শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।


এনালিটিক্যাল কোন টুলগুলোর এর কি কাজ?


ডেটা এনালাইজ করার সময় ডেটা এনালিষ্টদের বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করে কাজে এগিয়ে যেতে হয়। যেমনঃ


  • এনালাইসিস এর বিজনেস মোটিভ নির্ধারণ করে নেওয়া

  • ডেটা মাইনিং

  • ডেটা ক্লিনিং

  • ডেটা এক্সপ্লোরেশন

  • প্রেডিক্টিভ মডেল তৈরি করা

  • ডেটা ভিজুয়ালাইজ করা


ইত্যাদি। (উপরোক্ত টেকনিক্যাল টার্মগুলো সম্পর্কে আপনারা সেল্ফ লার্নিং এর সময়ে বিস্তর ধারনা পেতে শুরু করবেন)


উপরে উল্লেখিত ধাপ গুলো সম্পাদন করতে একজন ডেটা এনালিষ্ট কে বিভিন্ন টুলস এবং প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়।


মাইক্রোসফট এক্সেল (Excel) /এস.পি.এস.এস (SPSS)


মাইক্রোসফট এক্সেল বা এস.পি.এস.এস এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন স্ট্যাটিস্টিক্যাল এনালাইসিস করতে পারবেন। এক্সেল এ কাজ করতে গেলে আপনাকে এক্সেলের নিজস্ব বিভিন্ন ফাংশন শিখতে হবে,সর্টিং,ফিল্টারিং এর মতো বিভিন্ন ফিচার সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। এস.পি.এস.এস এর মাধ্যমেও স্ট্যাটিসটিক্যাল এনালাইসিস করা হয়ে থাকে, তবে এটি এক্সেল থেকেও বেশি ডেটা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম এবং এনালাইসিস এর জন্য এক্সেল এর থেকে বেশি শক্তিশালী। এক্সেল এ আপনি সর্বোচ্চ ১ মিলিয়ন রো (Row) নিয়ে কাজ করতে পারবেন।


এস.কিউ.এল (SQL)


এস.কিউ.এল একটি কোয়েরি ল্যাঙ্গয়েজ যার মাধ্যমে রিলেশনাল ডেটাবেজ থেকে একজন ডেটা সাইন্টিস্ট তার প্রয়োজনীয় ডেটা সমূহ সংশ্লিষ্ট ডেটাবেজ থেকে বের করে আনতে পারে।


পাইথন/আর


পাইথন এবং আর (R)  হচ্ছে দুইটি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এনালাইসিস এর এক পর্যায়ে প্রেডিক্টিভ মডেল তৈরি করার মতো আরও বিভিন্ন প্রয়োজনে পাইথন অথবা আর ব্যবহৃত হয়। 


পাওয়ার বি.আই (Power Bi) /ট্যাবলিউ (Tableau)


ডেটা এনালাইসিস কমপ্লিট হলে এবার ডেটা ভিজুয়ালাইজ করার পর্ব। আপনি এনালাইসিস করে কি পেলেন, কোন ডেটা অথবা ভ্যারিয়েবল অন্য কোন ডেটার সাথে সম্পর্কিত কিনা বা তাদের সম্পর্ক কতটুকু শক্তিশালী তা আপনি বিভিন্ন গ্রাফ বা চিত্রের মাধ্যমে ইন্টার‍্যাক্টিভ ড্যাশবোর্ড দিয়ে আপনার এক্সিকিউটিভদের সামনে ফুটিয়ে তুলবেন, এই কাজের জন্য আপনি পাওয়ার বি.আই অথবা ট্যাবলিউ ব্যবহার করতে পারেন।


মেশিন লার্নিং নিয়ে কিছু কথা


মেশিন লার্নিং যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি সাব ক্যাটাগরি তা আমরা এই আর্টিকেল এর শুরুতেই জানতে পেরেছি। এর বাস্তব উদাহরণ আমরা সব থেকে বেশি খেয়াল করতে পারি ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের ভিডিও রেকমন্ডশনের সময়। এখানে মেশিন লার্নিং মডেলটির এলগোরিদম এমন ভাবেই তৈরি করা হয়ে থাকে যা আপনার পছন্দ/অপছন্দ গুলোকে চিহ্নিত করে আপনার রুচি অনুযায়ী আপনাকে পরবর্তী ভিডিও রেকমেন্ড করতে থাকবে। আপনি যত এই এলগোরিদম ব্যবহার করতে থাকবেন, এই এলগোরিদম তত বেশি ডেটা পাওয়ার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী এবং নির্ভুল হয়ে উঠবে।


উদাহরণ হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে, ধরুন আপনার পরিবারের সদস্য চারজন। আপনার বাবা,মা,ভাই/বোন এবং আপনি। আপনারা চারজনই খুব গান শুনতে পছন্দ করেন। আপনার বাবা সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে এবং আশা ভোসলে এর গান শুনতে বেশি পছন্দ করেন, আপনার মা ধর্মীয় সঙ্গীত, আপনি ব্যান্ড সঙ্গীত এবং আপনার ভাই/বোন পপ সঙ্গীত শুনতে বেশি পছন্দ করে। সন্ধ্যার দিকে আপনার মা, না দেখেই বলে দিতে পারে যে কে গান শুনছে এবং তাকে নাম ধরে ডেকে গানের ভলিউম কমিয়ে দিতে বলেন। আপনি বুঝতে পারলেন আপনার মা আসলে এই জিনিস টা করতে পারে তখন চলতে থাকা গান শুনে। কারণ চারজনের গানের পছন্দ ভিন্ন। এখন আপনি একটি সফটওয়্যার তৈরি করে করতে চাচ্ছেন যেটি কিনা স্পিকারে বাজতে থাকা গান শুনে বলে দিতে পারবে এই গানটি কে শুনছে। আপনি মান্না দে'র বেশ কিছু গান আপনার তৈরি করা এলগোরিদম এ ইনপুট করে শিখিয়ে দিলেন যে এই গানগুলো চললে বোঝা যাবে এখন  আপনার বাবা গান শুনছেন,এরকম করে আপনার মা,ভাই/বোন এবং নিজের জন্যও একটি করে প্রোফাইল তৈরি করে নিলেন। সফটওয়্যারটি সিলেক্ট করা গানগুলোর থেকে গান বাজলেই বলতে পারছে এখন কে গান শুনছে। (বোঝার সুবিধার্থে উদাহরণ খুব সাধারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলো,তবে বাস্তবে আপনাকে অনেক জটিল জটিল বিপত্তি বিবেচনায় এনে মডেল তৈরি করতে হবে।)


বাংলাদেশে ডেটা সাইন্স ও মেশিন লার্নিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা


আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও তাল মিলিয়ে নিজেদের খাত কে উন্নত করতে ধীরে ধীরে ডেটা এনালিটিক্স এর দিকে এগিয়ে আসছে। যার কারণে আগামী কয়েক বছরের ভেতর ডেটা সাইন্সের বিভিন্ন পজিশন যেমনঃ ডেটা এনালিষ্ট,ডেটা ইঞ্জিনিয়ার,ডেটা সাইন্টিস্ট,মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার,ডেটা ম্যানেজার, ডেটা হেড  ইত্যাদি পজিশনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখার বিপুল পরিমাণ সম্বাভনা রয়েছে।এছাড়া বর্তমানে পাঠাও,দারাজ,শপ-আপ এর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোতে এন্ট্রি লেভেল ডেটা এনালিষ্ট এবং ডেটা সাইন্টিস্টদের নিয়োগ দিতে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং এই সেক্টরে লোকবলের চাহিদা বাইরের দেশের সাথে বাংলাদেশেও বাড়তে চলেছে।


আপনারা যারা এই লেখাটি আগ্রহ নিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লেন এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সম্ভাবনাময় সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে তাদের জন্য শুভ কামনা রইলো এবং যাদের ইংলিশ রিসোর্স থেকে ডেটা সাইন্স সেল্ফ লার্নিং এর সময় বুঝতে সমস্যা হয় তাদেরকে NBICT LAB এর ডেটা সাইন্স  সম্পর্কিত কোর্সগুলোর ফ্রি/পেইড ক্লাস গুলোতে অংশগ্রহণ করার পরামর্শ রইলো,তাহলে আশাকরি আপনাদের ডেটা সাইন্স শেখার এই যাত্রা আরও একটু গুছিয়ে নিতে পারবেন।


সবাইকে ধন্যবাদ



Writer: Shuvo Hasan
Hello! I am a campus ambassador at NBICT LAB. I am a student in the department of Economics at Pabna University of Science and Technology.

For any kind of feedback or support feel free to e-mail me at shuvohasabeco@gmail.com or ask your questions in the comment box.
Share:

No comments:

Post a Comment

Why NBICT LAB?

We work on -
1. Data Science & Machine Learning;
2. Microsoft Office Applications;
3. 3D Computer Graphics & Animation;
4. Graphic Design & Multimedia;
5. Website Design & Development;
6. Research & Data Analysis;
7. Training.

Contact Us

Name

Email *

Message *

Our News